“হিলিং দ্য এম্পটিনেস – আত্মিক ও মানসিক সুস্থতা অর্জনের গাইডলাইন” বইটি মূলত লেখা হয়েছে মানবজীবনের শূন্যতা, দুঃখ-কষ্ট এবং মানসিক আঘাতের কারণ ও সমাধান নিয়ে। এটি একটি মানসিক শান্তি এবং সুস্থতা অর্জনের জন্য শ্রেষ্ঠ বই।
“হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটিতে মোট ছয়টি ধাপে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়েছে (যদিও বা বইয়ের শিরোনাম দিয়ে উল্লেখ আছে চারটি ধাপ)। যেখানে প্রথম ধাপেই এসেছে “শূন্যতার আদি উৎস”। যেখানে মানবজীবনের শূন্যতা ও একাকিত্বের মূল কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে তুলে ধরা হয়েছে “ব্যথা-দূর্ভোগের উৎস চিহ্নিতকরণ”। এখানে ব্যথার প্রকৃত উৎস এবং তা কীভাবে চিহ্নিত করা যায় তার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে আলোচনা করা হয়েছে “নিরাময়ের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ”। এই ধাপে একাকীত্ব, শূন্যতা, মানসিক সুস্থতার পথে যেসব বাধা রয়েছে সেসব বাধাগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
প্রতিবন্ধকতার পর স্বাভাবিকভাবেই আসে চিকিৎসার কথা, যা এই বইয়েও মধ্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই চতুর্থ ধাপে বিস্তারিত বলা হয়েছে “ক্ষতের চিকিৎসা” নিয়ে। এই ধাপে মানসিক আঘাত ও ক্ষত নিরাময়ের বিভিন্ন উপায় নিয়ে বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
এরপর ক্রমান্বয়ে পঞ্চম ধাপে এসেছে “আত্মার সুরক্ষা”। এখানে আত্মাকে কিভাবে আমরা সুরক্ষিত রাখাবো, সে সম্পর্কে সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এবং সর্বশেষ ও ষষ্ঠ ধাপে আলোচনা করা হয়েছে “ব্যথাকে ভিন্নভাবে দেখা”-র বিষয়বস্তু নিয়ে। এই ধাপে ব্যথা ও কষ্টকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন লেখক।
আমরা আমাদের জীবনের চলার পথে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। কিছু সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলেও কিছু পারি না। আবার কিছু সমস্যার সমাধান আমাদের চোখের সামনে থাকলেও, আমরা তা দেখতে পাই না। আবার হঠাৎ-ই দেখা যায় আমরা আমাদের মনের মধ্যে শূন্যতা অনুভব করি। তীব্র ব্যথা ভর করে বুকের মধ্যে। অল্পতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি। আমাদের সবকিছু থেকেও মনে হয় কিচ্ছুটি নেই। চারপাশে এতো এতো কোলাহল থাকা সত্ত্বেও একাকিত্ব বাসা বাঁধে আমাদের মাঝে। আমরা দিনকে দিন আত্নিক এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আর এই অসুস্থতার চিকিৎসা নিয়েই লেখক লিখেছেন “হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটি। কিভাবে আমরা আমাদের একাকিত্ব, শূন্যতা কাটিয়ে মানসিক সুস্থতা অর্জন করবো তারই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে “হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটিতে।
বইটির মূল বিষয়ঃ
আমরা মনে করি বেশি টাকা-পয়সা, ভালো পোশাক, দামি গাড়ি, বাড়ি বা অনেক বড় সফলতা আমাদের শূন্যতা দূর করবে, কিন্তু বাস্তবে তা কি দূরীভূত করতে পারে? না পারে না। এগুলো কেবল সাময়িক স্বস্তি দেয়। কিন্তু প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসে না। আমাদের এই শূন্যতা একেবারের জন্য দূর করতে পারে না। আবার অনেকেই মনে করি প্রেম, ভালোবাসা কিংবা বিশেষ কোনো সম্পর্ক বা ভালোবাসার মানুষ আমাদের জীবনের সব সমস্যার সমাধান করবে। আমাদের একাকিত্ব দূর করবে। মানসিক শান্তি এনে দিবে। কিন্তু বাস্তবে কি সবাই এমন সম্পর্ক বা মানুষ পায়? বরং দেখা যায় আমাদের এই সম্পর্ক যখন প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করে না, তখন আমরা আরও বেশি শূন্যতা অনুভব করি।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই মনে করি, অতীতের কষ্ট ভুলে যাওয়াই বোধ হয় সমাধান। অতীতের এসব দুঃখ কষ্ট মনে রেখেই বা লাভ কি! বরং কষ্ট দিবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, আমাদের নিজেদের সকল যন্ত্রণা মোকাবিলা করতেই হবে। সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সব কিছুর সমাধান বের করতে হবে। তা না হলে তা আরও গভীর ক্ষতের জন্ম দেবে এবং আমরা আরও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বো।
আর আমরা আমাদের এই সকল শূন্যতা, মানসিক যন্ত্রণা দূর করতে চাই, কিন্তু সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে ব্যর্থ হই। লেখক “হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটিতে সেই সকল পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
“হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটিতে মূলত আত্মার শূন্যতা ও মানসিক অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধান করে কুরআন-সুন্নাহ-র আলোকে তার সমাধানের পথ দেখানো হয়েছে। লেখক তুলে ধরেছেন আমাদের দুঃখ-কষ্ট, হতাশা, একাকিত্ব এবং মানসিক অসুস্থতার মূল কারণসমূহ। লেখক আরও দেখিয়েছেন, কীভাবে আমরা ভুল জিনিসের প্রতি প্রত্যাশা রাখি, কীভাবে আমরা অস্থায়ী জিনিসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি এবং কীভাবে সৃষ্টির মধ্যে শান্তি খোঁজার প্রবণতার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ি। আর এইসবের জন্যই আমরা আমাদের আত্মিক এবং মানসিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলি।
আমরা কীভাবে এই আত্মিক এবং মানসিক সুস্থতা অর্জন করতে এবং কীভাবে আমরা আমাদের সত্যিকারের প্রশান্তির সন্ধান পেতে পারি তারই গাইডলাইন লেখক তুলে ধরেছেন “হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটিতে।

বইটির বৈশিষ্ট্যঃ
“হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আপনার সঙ্গে স্রষ্টার সংযোগ বৃদ্ধি করে দিবে। আপনি যদি আপনার স্রষ্টার ইবাদত-বন্দেগি থেকে ক্ষণিকের জন্য দূরে সরে যান, আপনাকে আপনার স্রষ্টার কাছাকাছি নিয়ে আসতে কিছুটা নয় বরং অনেকটাই সাহায্য করবে।
লেখার ধরণ এবং উপস্থাপনাঃ
“হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটির অনুবাদক এতো সুন্দর, সহজ এবং সাবলীল ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। লেখক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বইয়ের প্রতিটি বিষয়কে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। যেন মনে হয় লেখাগুলো জীবন্ত কথা বলছে। সবচেয়ে যে বিষয়টি নজর কেড়েছে তা হচ্ছে বইয়ের প্রতিটি সমস্যার সমাধানে কুরআন ও হাদিসের আলোকে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেখানে সঙ্গত কারণেই আরবি ভাষাও ব্যবহৃত হয়েছে।
আপনি যখন বইটি পড়বেন তখন মনে হবে এই বইটি তো একমাত্র আপনার জন্যই লেখা হয়েছে। একটু একটু করে পড়বেন আর অনুভব করবেন যে, আরে! এগুলো তো সব আমার জীবনের সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে। এবং আরও যখন পড়বেন তখন আপনার জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়ে যাবেন।
কারা এই বইটি পড়বেনঃ
i. যারা অন্তরে শূন্যতা অনুভব করেন।
ii. যারা প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ, হতাশা, একাকিত্ব শূন্যতার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
iii. যারা আত্মিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য একটা ভালো গাইডলাইন আশা করছেন।
iv. যারা ইসলামের আলোকে তার জীবন সমস্যার সমাধান চান।
v. যারা দুনিয়াবি সুখের পিছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
সীমাবদ্ধতাঃ
- যারা মূলত ধর্মীয় বিষয়গুলোর সঙ্গে কম পরিচিত (অর্থাৎ আরবি পড়তে এবং লিখতে পারেন না), তাদের জন্য কিছু কিছু অংশ জটিল এবং কঠিন মনে হতে পারে। তবে এই কারণে যে বইটি বুঝতে বড় কোন ধরনের অসুবিধা হবে তা নয়।
- বইটি পড়তে হলে আপনাকে ধৈর্য্যশীল এবং মনোযোগী হতে হবে। পড়তে পড়তে মনোযোগ অন্য কোথাও চলে গেলে আপনি যেই বিষয়টি পড়ছিলেন সেটা বুঝতে পারবেন না। তাই বইটি পড়ার সময় অবশ্যই অত্যন্ত মনোযোগী হতে হবে।
শেষ কথাঃ
“হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটি মানসিক ও আত্মিক সুস্থতা অর্জনের জন্য একটি মূল্যবান গাইডলাইন। লেখক আমাদের জীবনের শূন্যতা ও কষ্টের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সেইসবের কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। আপনি যদি সত্যিকার অর্থে মন থেকে সুখ এবং প্রশান্তি খুঁজে পেতে চান, তাহলে “হিলিং দ্য এম্পটিনেস” বইটি আপনার জন্য অবশ্য পাঠ্য।
- বইঃ হিলিং দ্য এম্পটিনেস – আত্মিক ও মানসিক সুস্থতা অর্জনের গাইডলাইন
- লেখকঃ ইয়াসমিন মুজাহিদ
- অনুবাদকঃ হামিদ সিরাজী
- প্রকাশকঃ সুলতানস ও গ্লোবাল বুকশেলভস
- প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর, ২০২২
- মূল প্রচ্ছদ ডিজাইনারঃ Gould Studio
- বাংলা প্রচ্ছদ ডিজাইনারঃ রেদোয়ান ইসলাম
- পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৮৪
- ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯.৫/১০
- রিভিউ লিখেছেনঃ বায়েজীদ বোস্তামী শুভ